Saturday 9 April 2016

Acanthus volubilis (হরগজা লতা)

হরগজা লতা বাদাবনের ঝোপ ধরনের গাছ বা গুল্ম। বসতি ও বেড়ে ওঠার প্রকৃতি বিবেচনায় একে লালবাদার অন্তর্ভূক্ত করা হয়। হরগজা লতার কাণ্ড হরগজার চেয়েও অশক্ত। তাই এ গাছ লতিয়ে বা চারপাশে ছড়িয়ে বেড়ে ওঠে।

বিবরণ
------------------------------------
হরগজা লতার কাণ্ড ৪ থেকে ৮ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এরা জলাভূমির পাড় বা অন্য গাছের গায়ে বেয়ে উঠতে পছন্দ করে। নিরিবিলি পরিবেশ পেলে এরা বেয়ে বেয়ে গাছের মাথায়ও উঠে যায়। যেখানেই জন্মাক না কেন, হরগজা লতা চারপাশে শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে দিয়ে নিজের বসতির এলাকা বাড়িয়ে নেয়। গাছটি গুচ্ছমূল দিয়ে মাটি ধরে রাখে; কখনও কখনও ঠেসমূলও দেখা যায়।

হরগজা লতার পাতার রঙ গাঢ় সবুজ, পাতায় কোনো কাঁটা নেই। পাতা দেখতে ডিম্বাকার বা চোখের মতো। পাতার উপরে ও নীচে মোমের মতো আস্তরণ আছে। শাখা থেকে বেরোনো ১০-১২ সেমি লম্বা শীষের মাথায় পাঁচ পাপড়ির ফুল হয়। নীলাভ সাদা রঙের ফুলগুলো বিশৃঙ্খলভাবে ছড়িয়ে থাকে। ফুল থেকে হরগজার মতোই ক্যাপসুল আকৃতির ফল হয়।

ফল হলে কী হবে, হরগজা লতা বংশবৃদ্ধির জন্য মোটেই শুধুমাত্র ফলের উপর নির্ভরশীল না। গাছের গোড়ার দিকে যে শাখাগুলো বেরোয় সেগুলো একটু ঊর্বর মাটি পেলেই শেকড় গজিয়ে নিজেরা এক একটা গাছে পরিণত হয়। আবার, শুকনো ফল ফেটে বীজ ছড়িয়ে পড়ে দুই থেকে আড়াই মিটার দূরে। সেখানেও নতুন চারা গজায়। হরগজা লতা বিপুল হারে বাড়তে পারে এবং অন্য গুল্মের এলাকা দখল করে নেয়।

আবাসস্থল
------------------------------------
হরগজা লতা সাধারণত কাদাময় স্থানে ঘাস ও অন্যান্য গুল্মের সঙ্গে জন্মায়। সাধারণত উপকূলীয় ডোবা, জলাভূমি ও খালের পাড়ে এ হরগজা লতা পাওয়া যায়।

পরিব্যাপ্তি
------------------------------------
বাংলাদেশ, ব্রুনেই, কম্বোডিয়া, চীন, হংকং, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মায়ানমার (বার্মা), পাপুয়া নিউগিনি, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে হরগজা লতা পাওয়া যায়। হরগজার একই গণ-এর আর দুটি প্রজাতি হলো হরগজা (Acanthus ilicifolius) ও Acanthus ebracteatus। হরগজা লতার মতোই Acanthus ebracteatus -এর ফুলের রঙ শাদা। আর হরগজার কথা তো আগেই বলা হয়েছে।

বৈজ্ঞানিক নাম ও সমনাম
------------------------------------
হরগজা লতার বৈজ্ঞানিক নাম Acanthus volubilis। এর নামকরণ করেছেন নাথানিয়েল ওয়ালিস (Nathaniel Wallich) যাঁকে সংক্ষেপে ওয়াল. (Wall.) নামে অভিহিত করা হয়। অন্যান্য নামগুলো হলো : Dilivaria scandens Nees ও Dilivaria volubilis (Wall.) Nees

স্থানীয় নাম
------------------------------------
ইংরেজিতে হরগজা লতাকেও Sea Holly বা Holly Mangrove বলা হয়। ভারতীয় বাংলায় লতা হরগজা, চীনে লাও শু লে (Lao shu le), ফিলিপাইনে ডাগুরাই (Dagurai), জার্মান ভাষায় স্টেচপমেনব্লাট্রিগ বারেনক্লাউ (Stechpalmenblättrige Bärenklau), জাপানে আকানসাসু ইরিকিফোরিয়াসু (Akansasu irikiforiusu), মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে জেরুজু (Jeruju), মিয়ানমার (বার্মা)য় খা-ইয়ার-নুয়ি (Kha-yar-nwe), উড়িয়া ভাষায় হরকঞ্চা (Harakancha), তুরস্কে কোবানপুস্কুলু ইয়াপ্রাকি আয়ি পেনসেসি (Çobanpüskülü yaprakli ayi pençesi) এবং ভিয়েতনামে ও রো (O Ro) বলা হয়।

ব্যবহার
------------------------------------
প্রাচীনকাল থেকে আলসার, কালাজ্বর ও কাশির চিকিৎসায় হরগজা লতা ব্যবহার করা হয়। এছাড়া চুলপড়া বন্ধ করতে, বাঘ বা সাপের কামড়ের পর বিষক্রিয়া কমাতে, কৃমির চিকিৎসায় এবং রক্ত পরিস্কার করায় হরগজা লতার পাতা ও বীজ ব্যবহারের নজির আছে।

সংরক্ষণ পরিস্থিতি
------------------------------------
আইউসিএন-এর বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় (IUCN Red List) হরগজাকে ন্যুনতম বিপদাপন্ন (Least Concern) হিশেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যদিও জাতিসঙ্ঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিবেদন (২০০৫) অনুসারে বলেছে ১৯৮৭ সালের পরবর্তী ২৫ বছরে হরগজা লতার ২৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। পৃথিবীব্যাপী বাদাবনের আয়তন ও ঘনত্ব কমে যাবার কারণে হরগজার সংখ্যাও কমে যাচ্ছে বলে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন।
Acanthus volubilis
Acanthus volubilis

প্রদায়ক
------------------------------------
হাসান মেহেদী (mehedi.coastline@gmail.com)